ফটিকছড়ির চা শিল্পঃ
ফটিকছড়িতে বিভিন্ন শিল্পের মধ্যে চা শিল্প অন্যতম উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে অবস্থিত ১৭টি চা বাগান শিল্পের দিক দিয়ে ফটিকছড়িকে সমৃদ্ধ করেছে বা শিল্পে বাংলাদেশে সিলেটের পর চট্টগ্রামের স্থান। আর চট্টগ্রাম বৃহত্তম চা বাগান গুলি একমাত্র ফটিকছড়িতে অবস্থিত। দেশে চাহিদার বিরাট একটি অংশ ফটিকছড়িতে উৎপাদিত চায়ের মাধ্যমে পুরণ করা হয়। ইতিহাস ঐতিহ্যের তুলে দিকে তাকালে দেখা যাবে ফটিকছড়ির ১৭টি চা বাগানের প্রতিষ্টা নামকরন অবস্থান সমস্যা সম্ভাবনা এক দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। যা তুলেধরা নিঃসন্দেহে দুরহ ব্যাপার। তবে একথা সত্য যে ফটিকছড়ির হাজার হাজার একর উর্ব্বর ভুমি চা বাগানগুলোর দখলে। সরকার এসব চা বাগান প্রতিষ্ঠার পর থেকেই বেসরকারী খাতে ছেড়ে দিয়ে লিজ দিয়ে থাকে ব্যক্তি মালিকানায় এসব বাগান লিজ দিয়ে সরকার প্রত্যেক বছর বিশাল অংকের রাজস্ব আয় করলে ও বাগানের রক্ষনাবেক্ষন তথা চা শিল্পের প্রসারে সুদুর প্রবাসি পরিকল্পনা হাতে নিচ্ছেনা। ফলে চা বাগানগুলো নানা সমস্যায় জর্জরিত। এসব সমস্যার বেড়াজালে পড়ে চা শিল্পের উল্লেখযোগ্য কোন প্রসার ঘটছেনা। এ অবস্থা চলতে থাকলে আগামিতে বিদেশে চা রপ্তাণী করা তো দুরের কথা দেশে চায়ের চাহিদা পুরণ করা ও কঠিন হয়ে পড়বে বলে সংশ্লিষ্ঠ সূত্রগুলো মনে করছে। বর্তমান ফটিকছড়িতে যে ১৭টি চা বাগান রয়েছে এগুলো হচ্ছে-
v কর্ণফুলি চা বাগান
v কৈয়াছড়া চা বাগান
v উদালিয়া চা বাগান
v বারমাসিয়া চা বাগান
v এলাহীনুর চা বাগান
v রাঙাপানি চা বাগান
v আছিয়া চা বাগান
v নাছিয়া চা বাগান
v দাঁদমারা চা বাগান
v নিউ দাদমারা চা বাগান
v হালদা ভ্যালী চা বাগান
v পঞ্চরটি চা বাগান
v মাজন চা বাগান
v রামগড় বিড়ি আড়াই চা বাগান।
এসব চা বাগান এশিয়ার বৃহত্তম চা বাগানগুলোর একটি। এছাড়া রাঙ্গামাটিয়া বারমাসিয়া চা বাগানও মোটামুটি বড়। খোজ নিয়ে জানা গেছে চা সম্ভাবনায় চা বাগানগুলো প্রায় সময় হাত বদল হয়ে থাকে। ইতিমধ্যে বেশ কয়েকটি চা বাগানের মালিকানা হাত বদল হয়েছে। তার মধ্যে কর্ণফুলী গ্রুপের বারমাসিয়া সুজানগর, ব্রাকের উদালিয়া মোসত্মাফা গ্রুপের হালদা ভ্যালী রয়েছে। এলাহী নুর রাঙাপানি টিকে পেডরলোর মালিকানাধীনে প্রভাবশালী ব্যবসায়ী হওয়া বাগানগুলো সম্ভাবনা অনেকটা উজ্জল বলে ধারনা করা হচ্ছে।
চা বাগানের সমস্যা ও সম্ভাবনা :
ফটিকছড়ি উপজেলার সর্বপূর্বে লেলাং ও কাঞ্চন নগরে অবস্থিত কর্ণফুলী চাবাগান। কর্ণফুলী নদীর নামে নাম করনে এ বাগানের নামকরন করা হলেও অনেকের কাছে এটি ফেনুয়া বা ফেইন্যা বাগান নামে পরিচিত শুধু বাংলাদেশ তথা চট্টগ্রামে নয় এটি এশিয়ার বৃহত্তম চা বাগানগুলোর একটি বলে বাগানের কর্মকর্তাদের সূত্রে জানা গেছে। বর্তমানে এ বাগানের আয়তন ৬ হাজার ৫৭২ একর। প্রতিবছর এ বাগানে চা উৎপাদন হয় সাড়ে ৮ লাখ কেজি। বিশাল এ বাগানে নারী পুরুষ মিলে চা শ্রমিকের সংখ্যা প্রায় ১৬০০ শত। এছাড়া বাগানে ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে একজন ম্যানেজারসহ ৯ জন কর্মকর্তাও ৩৫ জন কর্মচারী রয়েছে। বাগানে চা শ্রমিকদের সাথে মালিক ও কর্মকর্তাদের মধ্যে সুসর্ম্পক বিদ্যামান। কর্ণফুলি চা বাগানে উন্নতজাতেরসহ একাধিক কোয়ালিটির চা উৎপাদন করা হয়।
চা বাগানের সমস্যা :
বৃহত্তম ও সম্ভাবনাময় চা বাগান হওয়া সত্ত্বেও এ বাগানে রয়েছে নানা সমস্যা। যা বাগানের সম্ভাবনাকে ব্যহত করছে। বাগানের কর্মকর্তাদের অনেকের সাথে আলাপকালে তারা জানান বাগানে পানি সংকট শ্রমিক অপ্রতুল বিদ্যুতের লোড শেডিং গ্যাস সংযোগ না থাকা বাগানে যাতায়াতের রাসত্মাঘাট খারাপ উল্লেখযোগ্য। বাগানের কর্মকর্তা জনাব ইলিয়াছ জানান পানি সংকট সমস্যা বাগানের চা উৎপাদন ব্যহত ও সমস্যার সৃষ্টি করছে। সেচের ব্যবস্থা না থাকায় প্রকৃতির উপর নির্ভর করতে হয়। চা বাগানে পানি তথা গ্রীষ্ম মৌসুমে সেচের মাধ্যমে পানির ব্যবস্থা করা গেলে বাগানের উৎপাদন ¯^vfvweK রাখার পাশাপাশি উৎপাদন ও বেশী আশা করা যায়। এছাড়া বাগানে নেই গ্যাস সংযোগ। ফলে বিশাল অংকের জ্বালানী কিনে বাগানের চা উৎপাদন সচল রাখতে হয়। এতে উৎপাদন খরচ বেশী পড়ে। সরকারী উদ্যোগে ফটিকছড়ির সফল চা বাগানে গ্যাস লাইন সমপ্রসারন করা গেলে বাগানের উৎপাদন খরচ কিছুটা কমে আসবে। এতে বাজারে এর প্রভাব পড়বে। এছাড়া বাগানে যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম ফটিকছড়ি কর্ণফুলী চা বাগান সড়কটি অত্যনত্ম নাজুক। যানবাহন চলাচলের অযোগ্য। এছাড়া ব্রীজ কালভাটগুলো ও অত্যনত্ম ঝুকিপূর্ণ । এছাড়া আগে বাগানে আইন শৃঙ্খলা খারাপ থাকলেও বর্তমানে স্থিতিশীল বলে জানালেন বাগানের কর্মকর্তাদের অনেকেই। বাগানে কর্মকর্তা কর্মচারীদের তেমন কোন সমস্যা না থাকলেও চা শ্রমিকদের সমস্যা প্রচুর। তারা বাগানের অন্যতম চালিকা শক্তি হাল ও তাদের সুযোগ সুবিধা অত্যনত্ম অপ্রতুল। তাদের জীবন যাত্রা অত্যনত্ম নিম্ন মানের। আবাসিক সমস্যা শ্রমিকদের অন্যতম সমস্যা। শ্রমিকদের অনেকেই তাদের সমস্যার কথা জানিয়ে তা সমাধানের দাবী জানান।
সম্ভাবনা :
কর্ণফুলী চা বাগানে কিছু কিছু সমস্যা থাকলেও সম্ভাবনা অফুরনত্ম। গোটা বাগানকে চা বাগানের আওতায় আনা গেলেও চা চাষের পাশাপাশি বনায়ন পিসি কালচার হটি কালচার সর্বোপরী চা বাগানের আভ্যনত্মরিন সব সমস্যা দুর করা গেলে চা বাগানটি আরো সমৃদ্ধশালী হবে বলে অভিজ্ঞ মহলের ধারনা।